Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

গল্প নয় সত্যি


 

জিডিপিতে মৎস্য সম্পদের অবদান ৬০ হাজার কোটি টাকা : মৎস্যজাত পণ্য রফতানি করে বছরে আয় ৪ হাজার ২শ’ ৮৩ কোটি টাকা
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও মানবদেহের পুষ্টির চাহিদা পূরণে মৎসসম্পদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। মানুষের দৈনন্দিন জীবনে খাদ্য তালিকায় আমিষের ৬০ ভাগ যোগান দিচ্ছে মাছ। এ ছাড়া মৎস রফতানির মাধ্যমে বছরে আয় হচ্ছে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা। শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতে গুরুত্বের পর মৎস্য খাতকেও অতি গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বর্তমান সরকার নানা কর্মসূচি নিয়েছে। এটি সঠিকভাবে মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ মৎস সম্পদ উৎপাদনে বড় ধরনের সাফল্য অর্জন করবে। ইতোমধ্যে মাঠপর্যায়ে বেশ কয়েকটি কর্মসূচি বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গত পাঁচ বছরে জাতীয় মাছ ইলিশসহ অন্যান্য প্রজাতির সামুদ্রিক মাছের উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। তবে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছ বিলুপ্তির কারণ এখনো সঠিকভাবে উদঘাটন করা যায়নি। প্রকৃতিকভাবে উৎপাদিত দেশীয় এ মাছ খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর। অন্যদিকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে উৎপাদিত মাছে তেমন স্বাদ ও পুষ্টির চাহিদা পূরণ সম্ভব নয় বলে মনে করছেন মৎস্য বিজ্ঞানীরা। এর পরও বর্তমান সরকার এ সেক্টরকে অতি গুরুত্বপূর্ণ মনে করে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে। গত পাঁচ বছরের মৎস্য উৎপাদনের সরকারের সাফল্যকে অর্থনীতিবিদরা প্রশংসা করছেন। বর্তমানে বিশে^ মৎস সম্পদ উৎপাদনে বাংলাদেশ চতুর্থ স্থানে রয়েছে।
মৎস্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশে মাছের উৎপাদন হয়েছে ৩৮ লাখ ৭৮ হাজার মেট্রিক টন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ উৎপাদন ৪০ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রায় ৭৫ হাজার ৩৩৮ মেট্রিক টন মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য বিদেশে রফতানি করে চার হাজর ২৮৩ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের অর্থনীতি সমীক্ষায় ২০১৭ সাল অনুযায়ী জিডিপিতে মৎসখাতের অবদান ৩.৩১ শতাংশ এবং কৃষিজ জিডিপেতে অবদান প্রায় এক-চর্তুথাংশ। যা চলতি বাজার মূল্যে জিডিপিতে মৎস্য সম্পদের অবদান প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। গত পাঁচ বছরে মৎস্যখাতে গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৬.২৬ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার ঘোষণায় প্রধান লক্ষ্য হলো দারিদ্র্য নিরসন। দরিদ্রতা হ্রাসের অন্যতম উপায় হচ্ছে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। মৎস্য খাত এ কর্মসংস্থান সৃষ্টি বিশাল ভ‚মিকা রাখছে। প্রতি বছর এ খাতে প্রায় ছয় লাখ লোকের নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে। গত ১০ বছরে প্রায় ৬০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বৈশি^ক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে কৃষির পাশাপাশি মৎস্য খাতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। কৃষিতে ক্ষতিকর কীটনাশকের যথেচ্ছ প্রয়োগ ও কারখানার দূষিত বর্জ্যে দেশের প্রাকৃতির ও মুক্ত জলাশয় ক্রমাগত দূষিত হচ্ছে এবং বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে এ থেকে উত্তরণের লক্ষে মৎস্য উৎপাদনের নানামূখী উদ্যোগ যেমন আধুনিক পদ্ধতিতে মৎস্য চাষ ব্যবস্থাপনা, অপ্রচলিত মৎসপণ্য উৎপাদন, বিল নার্সারি কার্যক্রম বাস্তবায়ন, ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন, প্রাকৃতিক মৎস প্রজনন ক্ষেত্রের উন্নয়ন ও সংরক্ষণের ফলে মৎস্য উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি বেড়ে চলছে। এ সকল কাজের ফলে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মূল্যায়ন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মৎস্য উৎপাদনে বিশে^ চতুর্থ স্থান এবং বদ্ধ জলাশয়ে মৎস্য উৎপাদানে পঞ্চম স্থান অধিকার করেছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র এমপি ইনকিলাবকে জানান, বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতি, সমৃদ্ধি ও সর্বোপরি দারিদ্য দূরীকরণে মৎস্য খাতের অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ ও কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে এ খাতের উন্নয়ন বেড়েই চলছে। ফলে, দেশের বর্ধিত জনগোষ্ঠীর প্রাণীজ আমিষ, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিকরণ, দারিদ্র্য বিমোচন, তা ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক ঘোষিত রূপকল্প-২০২১ পর্যন্ত বার্ষিক পরিকল্পনা ও টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ঠ লক্ষ্য অর্জনে এ সেক্টরে ব্যাপক কর্মকান্ড রয়েছে। মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মোহাম্মদ ছায়েদুল হক এমপি ইনকিলাবকে জানান, অভ্যন্তরীণ জলাশয় মাছ উৎপাদনের পাশাপাশি অমিত সম্ভাবনাময় আমাদের সমুদ্র সম্পদের সর্বোচ্চ ও সহনশীল ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষে কাজ করছে। বর্তমান সরকার গবেষণা ও জরিপ কাজ পরিচালনার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার মাছের মজুদ নির্ণয় এবং মৎস্য আহরণের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার ও সর্বোচ্চ আহরণ মাত্রা নির্ধারণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
মৎস্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ভিত্তি বছর ধরে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (২০১৬-২০) মৎস্য খাতে অর্জিতব্য লক্ষ্য নিধারণ করা হয়েছে। লক্ষগুলো হচ্ছে- ভিত্তি বছরের তুলনায় চাষকৃত মাছের উৎপাদন ১৮.৬০ লাখ মেট্রিক টন থেকে ৪৫ শতাংশ এবং জলাশয় মাছের উৎপাদান ৯.৬১ লাখ মেট্রিক টন থেকে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি। ভিত্তি বছরের তুলনায় ইলিশের এবং সামুদ্রিক মাছের উৎপাদন ৫.৮৯ লাখ মেট্রিক টন থেকে ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি। দৈনিক মাথাপিছু মাছ গ্রহণের নিশ্চিতকরণ, মৎস চাষ বা মৎস্যজীবীদের আয় ২০ শতাংশ বৃদ্ধিকরণ এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে নিরাপদ খাদ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে উদ্যোগ গ্রহণ।
সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের কারণে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে ৪০.৩৯ লাখ মেট্রিক টন চাহিদার বিপরীতে মৎস্য উৎপাদন ৪০ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন অর্জিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিগত ১০ বছরের মৎস্য উৎপাদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, এ খাতে বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৫.২৪ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে প্রায় স্থিতিশীলতা বিরাজমান, উৎপাদনের ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ২০২০-২১ সালের মধ্যে দেশে মৎস্য উৎপাদান ৪৫ লাখ ৫৪ হাজার, ফলে ২০২০-২১ সালে দেশে বর্ধিত জনগোষ্ঠীর জন্য প্রক্ষেপিত মৎস্য চাহিদা ৪৩ লাখ দুই হাজার মেট্রিক টন পূরণ করা সম্ভব হবে।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ইতোমধ্যেই রুইজাতীয় মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি পাঙ্গাস, কৈ, শিং, মাগুর ও তেলাপিয়া মাছের উৎপাদনের ক্ষেত্রে নীরব বিপ্লব ঘটে গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় অপ্রচলিত মৎস্যপণ্য যেমন- কাঁকড়া ও কুঁচিয়ার চাষ প্রযুক্তি সম্প্রসারণের উদ্যোগে নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। ২০১০-১১ সালে কুঁচিয়া রফতানির পরিমাণ ছিল তিন হাজার ২৯৫ মেট্রিক টন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশের ৩.৭২ লাখ হেক্টর পুকুর দীঘিতে বার্ষিক হেক্টরপ্রতি গড় মৎস্য উৎপাদন প্রায় ৪.৬২ মেট্রিক টন। এটি অব্যাহত থাকলে ২০২০-২১ অর্থবছরে মধ্যে হেক্টরপ্রতি মৎস্য উৎপাদন হবে ৫.০০ মেট্রিক টন।